রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার

নীতিমালা

ক. প্রস্তাবনা :
হজরত শাহজালাল (রহ.) ও তিনশো ষাট আউলিয়ার পদস্পর্শে ধন্য সিলেট তথা জালালাবাদ জাতীয় ইতহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিনির্মাণে যুগ যুগ ধরে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছে। এ অবদানের ক্ষেত্রে জালালাবাদের লেখক সাহিত্যিকদের ভ‚মিকা কোনো অংশে কম নয়। জাতীয় সাহিত্যের বিকাশে তাদের অবদান নানা সময়ে কৃতজ্ঞতার সাথে উচ্চারিত হয়। কিন্তু তাদের প্রতিভার যোগ্য সম্মাননা প্রদানের জন্য এ পর্যন্ত কোনো উল্লেখ্যযোগ্য উদ্যোগ গৃহীত হয়নি। এ অপূর্ণতা পূরণের লক্ষ্যে দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি, শিক্ষানুরাগী, শিল্প-সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক, প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, চা শিল্প-উদ্যোক্তা, সিলেটের কৃতি সন্তান, দানবীর ডক্টর সৈয়দ রাগীব আলী বিভিন্ন সময় লেখক, কবি, সাহিত্যিকদের সহযোগিতা প্রদানে তাঁর দানশীল হাত সম্প্রসারিত করে আসছেন। তাঁর এ দানশীলতাকে জালালাবাদের লেখক, কবি, সাহিত্যিকদের কল্যাণে এবং তাদের প্রতিভার স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে একটি সুনির্দিষ্ট রূপ দেয়ার নিমিত্তে তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা ও অর্থানুক‚ল্যে ‘রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার’ নামে এই সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তন করা হলো। 
 
 
খ. উদ্দেশ্য : 
বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান সৃষ্টিকারী সিলেট বিভাগের (সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ) জেলার জন্মগত অধিবাসী সমসাময়িক সাহিত্যসেবীদের উল্লেখযোগ্য অবদানসমূহ সনাক্ত করে তাদের সৃজনী প্রতিভা বিকাশে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করাই ‘রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার’ প্রদানের উদ্দেশ্য। 
 
গ. পুরস্কারে বিবরণ :
১. এই পুরস্কারের নাম ‘রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার’।
 
২. বাংলা সাহিত্যের যেকোনো শাখায় (যেমন-কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, গবেষণা, নাটক, সাহিত্য সমালোচনা, শিশুসাহিত্য রচনা) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এই পুরস্কার প্রদান করা হবে। 
 
৩. এই পুরস্কার দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি ও বিদ্যোৎসাহী দানবীর ডক্টর সৈয়দ রাগীব আলীর পৃষ্ঠপোষকতা ও ব্যক্তিগত অর্থানুকূল্যে প্রদান করা হবে। পুরস্কারের অর্থ, সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট প্রদান ও বিতরণ এবং এতদ্সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয় তিনি স্বেচ্ছায় স্ব-প্রণোদিত হয়ে বহন করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
 
৪. ভবিষ্যতে এই পুরস্কার অব্যাহত রাখার স্বার্থে তাঁর অর্থানুকূল্যে একটি স্থায়ী ফান্ড সৃষ্টির চেষ্টা থাকবে।
 
৫. এই পুরস্কার সাধারণত প্রতি বছর প্রদান করা হবে। 
 
৬. প্রতি বছর একত্রে ২ (দুই) জন লেখক, কবি, সাহিত্যিককে পুরস্কার প্রদান করা হবে। তবে কোনো বছর একত্রে ২ (দুই) জন যোগ্য লেখক কবি, সাহিত্যিক পাওয়া না-গেলে কিংবা অন্য কোনো অসুবিধা দেখা দিলে ২ (দুই) জনের পরিবর্তে ১ (এক) জনকে পুরস্কার প্রদান করা হবে। এই ক্ষেত্রে পুরস্কৃত সাহিত্যিককে ১ (এক) জনের জন্য প্রযোজ্য অর্থ (অর্থাৎ ২৫,০০০/=) টাকা, ১ (এক) টি সম্মাননাপত্র ও ১ (এক) টি ক্রেস্ট প্রদান করা হবে। 
 
৭. এই পুরস্কারের মূল্যমান হবে প্রতি জনের জন্য ২৫,০০০/= (পঁচিশ হাজার) টাকা করে মোট ৫০,০০০/= (পঞ্চাশ হাজার) টাকা । পুরস্কৃত সাহিত্যিককে উল্লেখিত অংকের অর্থ ছাড়াও ১ (এক) টি সম্মাননাপত্র ও ১ (এক) টি ক্রেস্ট প্রদান করা হবে। সম্মাননাপত্রে দানবীর ডক্টর সৈয়দ রাগীব আলী মহোদয়ের স্বাক্ষর থাকবে। 
 
৮. সাধারণত কাউকে মরণোত্তর পুরস্কার প্রদান করা হবে না। তবে পুরস্কার ব্যবস্থাপনা কমিটির বিবেচনাধীন থাকাকালে যদি কোনো সাহিত্যিকের মৃত্যু ঘটে, তবে বিশেষ বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট সাহিত্যিককে মরণোত্তর পুরস্কার প্রদান করা যাবে।
 
৯. সাধারণত প্রতি বছর এই পুরস্কার প্রদান করা হবে। যেকোনো বছরে পুরস্কার ব্যবস্থাপনা কমিটি যদি কাউকে পুরস্কৃত হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচনা না-করেন, তাহলে সেই বছরে কোনো পুরস্কার প্রদান করা হবে না। 
 
ঙ. পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা :
১. একমাত্র সিলেট বিভাগের অন্তর্ভুক্ত জেলাসমূহ যথা : সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের জন্মগত অধিবাসী, লেখক, কবি, সাহিত্যিকগণ এই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
 
২. উক্ত এলাকার (সিলেট বিভাগের) ধর্ম, বর্ণ, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে যেকোনো লেখক, কবি, সাহিত্যিক এই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন বলে বিবেচিত হবেন।
 
৩. এই পুরস্কার কেবল ব্যক্তিকে দেয়া হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা দলকে এই পুরস্কার প্রদান করা যাবে না। 
 
৪. পুরস্কারের জন্য মনোনীত সাহিত্যিকের কমপক্ষে দশটি প্রকাশিত গ্রন্থ থাকতে হবে এবং জাতীয় পর্যায়ে তাঁকে সুনামের অধিকারী হতে হবে।
 
৫. পুরস্কারের জন্য কোনো ব্যক্তিগত আবেদনপত্র গ্রাহ্য হবে না। 
 
৬. কোনো লেখক, কবি, সাহিত্যিককে জীবনে শুধুমাত্র একবারই এই পুরস্কার প্রদান করা যাবে। 
 
৭. সংশ্লিষ্ট বছরের জন্য গঠিত পুরস্কার ব্যবস্থাপনা কমিটির কোনো সদস্যকে সংশ্লিষ্ট বছরের পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা যাবে না। 
 
চ. পুরস্কার ব্যবস্থাপনা কমিটি :
১. প্রতি বছর এই পুরস্কার প্রদানের জন্য একটি কমিটি গঠিত হবে।
 
২. এই কমিটি ‘রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার ব্যবস্থাপনা কমিটি’ নামে অভিহিত হবে।
 
৩. এই কমিটি পুরস্কারের জন্য সাহিত্যিক মনোনয়ন, বিতরণ ও এতদ্সংক্রান্ত যাবতীয় দায়িত্ব পালন করবে।
 
৪. কমিটিতে দানবীর ডক্টর সৈয়দ রাগীব আলী মহোদয়ের পরিবারের সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে।
 
৫. প্রতি বছর পুরস্কার ব্যবস্থাপনা কমিটি নতুনভাবে গঠন করা হবে। একই ব্যক্তি একাধিকবার এই কমিটির সদস্য থাকতে পারবেন।
 
 
ছ. পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন :
১. পুরস্কার ব্যবস্থাপনা কমিটি স্বীয় উদ্যোগে পুরস্কারের জন্য লেখক, কবি, সাহিত্যিকের নাম প্রাথমিকভাবে প্রস্তাব করবেন।
 
২. স্বীয় উদ্যোগ ছাড়াও পুরস্কার ব্যবস্থাপনা কমিটি বিভিন্ন মহলের নিকট থেকে মৌখিক বা লিখিত প্রস্তাব আহ্বান করতে পারবেন।
 
৩. কমিটির স্বীয় উদ্যোগে এবং বিভিন্ন মহল থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাব নিয়ে পুরস্কার ব্যবস্থাপনা কমিটি দানবীর ডক্টর সৈয়দ রাগীব আলী মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করবে এবং উভয়ের সম্মতিক্রমে পুরস্কারের জন্য সাহিত্যিকগণের নাম চূড়ান্ত করা হবে।
 
জ. পুরস্কার ঘোষণা :
১. সংশ্লিষ্ট বছরের প্রতি ফেব্রুয়ারি মাসে পুরস্কার প্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হবে।
 
২. পুরস্কার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব-এর স্বাক্ষরে জাতীয় পত্রপত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশন প্রভৃতি প্রচার মাধ্যমে পুরস্কার প্রাপ্তদের নাম ঘোষণা সংক্রান্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রচারিত হবে। 
 
ঝ. পুরস্কার প্রদান :
১. এক বছরের পুরস্কার অর্থাৎ পুরস্কারের অর্থ, সম্মাননাপত্র  ও ক্রেস্ট সে বছরের জুন মাসের মধ্যে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রদান করা হবে।
 
২. দানবীর ডক্টর সৈয়দ রাগীব আলী, তাঁর অবর্তমানে তাঁর মনোনীত ব্যক্তি এই অর্থ, সম্মাননাপত্র ও ক্রেস্ট পুরস্কার প্রাপ্তদের হাতে তুলে দেবেন।
 
৩. পুরস্কার প্রাপ্ত লেখক, কবি, সাহিত্যিকদের সম্পর্কে একটি পরিচিতিমূলক পুস্তিকা/অনুষ্ঠান সংক্রান্ত স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করার চেষ্টা করা হবে।
 
ঞ. পরিশিষ্ট :
১. এই নীতিমালা সম্পূর্ণ বা আংশিক সংশোধন, সংযোজন, পরিবর্তন বা বাতিল করা অধিকার উদ্যোক্তার থাকবে।
 
২. এই নীতিমালার কোনো ধারা দ্ব্যর্থবোধক মনে হলে সেই সম্পর্কে উদ্যোক্তা এবং সংশ্লিষ্ট বছরের পুরস্কার ব্যবস্থাপনা কমিটির যৌথ সিদ্ধান্তেই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। 
 
৩. এই নীতিমালায় অনুল্লেখিত কোনো বিষয়ে উদ্যোক্তা এবং সংশ্লিষ্ট বছরের পুরস্কার ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।