প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান পরিচিতি

দানবীর ড. সৈয়দ রাগীব আলী

 
দানবীর ড. সৈয়দ রাগীব আলী ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ১০ অক্টোবর সিলেট জেলার রাগীবনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আলহাজ সৈয়দ রাশীদ আলী এবং মাতা বেগম রাবেয়া বানু। 
 
দানবীর ড. সৈয়দ রাগীব আলী শৈশবে বিশ্বনাথের তালিবপুর পাঠশালা ও লক্ষীবাসা মধ্যবঙ্গ বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন করেন। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনের পর তিনি রাজা জি.সি. হাইস্কুলে ভর্তি হন। রাজা জি.সি. হাইস্কুল থেকেই তিনি এসএসসি পাশ করেন। এসএসসি পাশের পর তিনি স্টুডেন্টশিপ ভিসা নিয়ে ইংল্যান্ড গমন করেন। ইংল্যান্ডে তিনি জেরার্ড স্ট্রিটের অ্যাশলি কলেজে ভর্তি হন এবং এ-লেভেল সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ ও এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেন। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকেই “টি ফর ফুড সিকিউরিটি” বিষয়ের ওপর সম্মানসূচক পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি চা-শিল্পের ওপর ‘ডিপ্লোমা ইন টি’ কোর্সও সম্পন্ন করেন। 
ড. সৈয়দ রাগীব আলী ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ মার্চ  সিলেটের আম্বরখানাস্থ রায়হুসেন মাহফিজ হাউজ পাক্কাবাড়ির জনাব ইরফান আলি চেীধুরীর পঞ্চম সন্তান রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির দুই সন্তান - সৈয়দ আব্দুল হাই ও  সৈয়দা রেজিনা কাদির।
 
ড. সৈয়দ রাগীব আলী ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে প্রবাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন অন্যতম সংগঠক। যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করে তখন লন্ডনে বসবাসরত বাঙালিরা বিভিন্ন শহরে সভা সমাবেশ করতে থাকেন। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা বিষয়ে জনমত গঠনের জন্য লিফলেট মুদ্রণ করান এবং তা বিতরণের ব্যবস্থা করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ও মালিকানাধীন তাজমহল রেস্টুরেন্টে যারা খাবার গ্রহণ করতে আসতেন তাদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করতেন। উদ্দেশ্য ছিল বিদেশীদের সহানুভূতি ও সমর্থন অর্জন করা। রেস্টুরেন্টের সামনেও প্ল্যাকার্ড স্থাপন করেন। এতে লেখা ছিল Stop Genocide in Bangladesh. Liberate Bangladesh। তখন ২৪ প্যামব্রিজ গার্ডেনে বাংলাদেশ সেন্টার স্থাপনের ক্ষেত্রেও দানবীর ড. সৈয়দ রাগীব আলী প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেন। নতুন একটা ইলেকট্রনিক টাইপরাইটার কিনে তিনি সেটা নিজের কাঁধে বহন করে বাংলাদেশ সেন্টারে পৌঁছে দেন। এই মেশিনটির দাম ছিল ২৬৫ পাউন্ড। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ সেন্টারের অফিসে একটি টেবিল, চারটি চেয়ার এবং সভাকক্ষের জন্য একটি কার্পেট কিনে দেন। মুক্তিযুদ্ধ তহবিলেও তিনি প্রভূত অর্থ দান করেন। এছাড়া তিনি মানুষের দ্বারে দ্বারে ও পথে পথে ঘুরে বাংলাদেশ তহবিলের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন। 
 
ড. সৈয়দ রাগীব আলী ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পুরোপুরি ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোনিবেশ করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি ও উদ্যোক্তা। তিনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, চা-শিল্প, ব্যাংক-বিমা ও বহু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। এছাড়াও তিনি অনেক সংস্থা-সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, পৃষ্ঠপোষক ও রূপকার। তন্মধ্যে উল্লে­খযোগ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হলো- প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান, সাউথইস্ট ব্যাংক লি.। প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্সুরেন্স কোম্পানি লি.। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ইত্যাদি।
 
ড. সৈয়দ রাগীব আলী বাংলাদেশের একজন সফল চা-শিল্প উদ্যোক্তা। চা-শিল্পের সার্বিক উন্নয়নের জন্য তার রয়েছে দীর্ঘ দিনের গবেষণামণ্ডিত ব্যতিক্রমধর্মী অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশের প্রাচীন চা বাগান মালনীছড়া টি এস্টেটসহ তার বেশ কয়েকটি চা বাগান রয়েছে। এগুলো হলো- রাজনগর চা বাগান, মৌলভীবাজার; লোভাছড়া চা বাগান, কানাইঘাট, সিলেট; দলই চা বাগান, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার এবং কাশীপুর চা বাগান, রাজনগর, মৌলভীবাজার । তিনি দি সিলেট টি কোম্পানি লি. এর স্বত্বাধিকারী।
 
ড. সৈয়দ রাগীব আলী অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তন্মধ্যে উল্লে­খযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো- প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, লিডিং ইউনিভার্সিটি, সিলেট। প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সিলেট। প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী নার্সিং কলেজ, সিলেট। প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান,  নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি, ঢাকা। প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ঢাকা  ইত্যাদি।
 
সমাজসেবায় ড. সৈয়দ রাগীব আলীর অবদান অপরিসীম। সমাজের উন্নয়নমূলক কাজে তার অনুদানের ধারা সর্বত্র অবারিত। মানবকল্যাণের জন্য তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন স্বনামধন্য দাতব্য সংস্থা ‘রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন’। যার মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, গরিব অসহায়দের মধ্যে আর্থিক সাহায্য প্রদান, বিয়ের খরচ, গৃহনির্মাণ ব্যয়, দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক অনুদান, মাসিক বৃত্তির ব্যবস্থা, বিনাবেতনে পড়াশোনার সুযোগ দান, বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসার্থে সাহায্য প্রদান করে যাচ্ছেন। তিনি সারা দেশে অনেক মসজিদ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা, মন্দির, বৌদ্ধবিহার, শহিদমিনার স্থাপনসহ বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে অনুদান প্রদান ও প্রতিষ্ঠাকরণে কাজ করে যাচ্ছেন।
 
এসব ছাড়াও তিনি গরিব রোগীদের জন্য জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, রাবেয়া বানু জেনারেল হাসপাতাল এবং রাবেয়া খাতুন চৌধুরী মাতৃসদন ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সিলেটের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-লিডিং ইউনিভার্সিটি, প্রথম বেসরকারি মেডিকেল কলেজ-জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, রাগীব-রাবেয়া ডিগ্রি কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেক গরিব মেধাবী ছাত্রছাত্রী বিনাবেতনে পড়াশোনাও করছে।
 
মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ড. সৈয়দ রাগীব আলীর ভূমিকা ও কর্মপরিকল্পনা আরও ব্যাপক। অসহায় ও গরিব মুক্তিযোদ্ধাদের পুর্নবাসন, ছেলেমেয়ের বিয়ে, বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য তাঁর প্রতিষ্ঠিত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে লেখাপড়ার সুব্যবস্থা করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের পুর্নবাসনে ড. সৈয়দ রাগীব আলী নিজ অর্থ ব্যয়ে সিলেট বিভাগের অনেক মুক্তিযোদ্ধার পাকাগৃহ নির্মাণ করে দিয়েছেন। চলমান এ প্রক্রিয়ায় আরও কিছু পাকা গৃহ নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে।
 
শিল্প-সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতায়ও ড. সৈয়দ রাগীব আলী ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছেন। অসচ্ছল প্রতিভাবান কবি-সাহিত্যিকদের অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি বই আকারে প্রকাশ করে তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিয়েছেন। প্রতিবছর ‘রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার’ ‘রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন একুশে সম্মাননা’ শীর্ষক দুটো পুরস্কার প্রদান করে থাকেন। জাতীয় মানসম্পন্ন এসকল পুরস্কারের সাথে রয়েছে নগদ অর্থ, ক্রেস্ট ও সনদ। শিল্প ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর এসব অবদান দেশ তথা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে।
 
ড. সৈয়দ রাগীব আলীকে নিয়ে এখন পর্যন্ত বেশ কিছু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এই মহান ব্যক্তির জীবন ও কর্মযজ্ঞ নিয়ে বিভিন্ন লেখক কর্তৃক রচিত, সম্পাদিত ও প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৭২টি। তন্মধ্যে উল্লে­খযোগ্য কয়েকটি হলো : রাগীব আলী-কর্মই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, বইটি লিখেছেন- ফোরকান আহমদ, প্রকাশকাল-২১ জুলাই ২০১০। মূল্যায়নের মানদণ্ডে দানবীর রাগীব আলী, বইটি লিখেছেন-হারূন আকবর, প্রকাশকাল-১ম সংস্করণ ২০০৪ ও ২য় সংস্করণ ২০১১। মাটি ও মানুষের রাগীব আলী, বইটি লিখেছেন-মঈনুল আহসান সাবের, প্রকাশকাল-ডিসেম্বর ২০০৫। । দানবীর রাগীব আলীকে নিবেদিত প্রাণের কথা গানে, বইটি সম্পাদনা করেছেন-সৈয়দ মোস্তফা কামাল, প্রকাশকাল-১ জানুয়ারি ২০১১।  Ragib Ali-A Legend of Success,  Writen By-Mohammod Mojibur Rahman, Published in-December 2012। ইতিহাস-ঐতিহ্য ও কর্মযোগী রাগীব আলী, বইটি লিখেছেন-সৈয়দ তোশারফ আলী, প্রকাশকাল-ফেব্রুয়ারি ২০১৩। দানবীর ড. রাগীব আলীর মহান কর্মযজ্ঞের রূপরেখা, বইটি লিখেছেন-প্রফেসর নন্দলাল শর্মা, প্রকাশকাল-আগস্ট ২০১৪ ইত্যাদি।
 
এ ছাড়াও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে স্বীয় জীবনের কিছু অম্লান স্মৃতি ও অভিজ্ঞতার আলোকে ড. সৈয়দ রাগীব আলী নিজেও একটি স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থটির নাম - আমার জীবন আমার স্মৃতি। বইটি প্রকাশ করেছে রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন; প্রকাশকাল-১ সেপ্টেম্বর ২০০৬।
 
ড. সৈয়দ রাগীব আলী মানবকল্যাণে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন ও আন্তজার্তিক অঙ্গন থেকে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। তন্মধ্যে উল্লে­খযোগ্য কয়েকটি পুরস্কার ও সম্মাননা  হলো :
শেরে বাংলা জাতীয় স্মৃতি সংসদ পুরস্কার-১৯৯৪, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী পুরস্কার ২০০৩-২০০৪, মীর মোশাররফ হোসেন স্বর্ণপদক-২০০৫, এফবিসিসিআই স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড SME Award ২০০৫, হোমিও পেশাজীবী সমিতি (হোপেস) কর্তৃক হ্যানিম্যান পদক-২০০৫, লন্ডনের ‘চ্যানেল এস’ কর্তৃক লাইফ টাইম এচিভম্যান্ট  অ্যাওয়ার্ড-২০০৯, ঐতিহ্য ফাউন্ডেশন কর্তৃক নওয়াব সলিমুল্লাহ স্বর্ণপদক-২০১০, British Bangladesh Chamber of Commerce Lifetime achievement Award, Uk-2010, যুক্তরাজ্যের লন্ডন কর্তৃক হুজ’হু অ্যাওয়ার্ড-২০১২ ইত্যাদি।
 
বায়োগ্রাফিক্যাল ওয়েব লিঙ্কঃ http://ragibali.info/