সহ-প্রতিষ্ঠাতা পরিচিতি

মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী

 
মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী আম্বরখানার রায়হুসেন পাক্কাবাড়িতে ১৯৪৬ সনের ৫ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ইরফান আলী চৌধুরী এবং মাতা নাঈমা বানু চৌধুরী। দুই ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে লেখাপড়া করেন। কলেজ জীবনে তিনি নারী আন্দোলন ও শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে পড়া মুসলিম জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে কাজ করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি যখন আইএ পরীক্ষার্থী তখন সিলেট জেলার রাগীবনগর নিবাসী সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের আলহাজ্ব সৈয়দ রাশিদ আলী সাহেবের পুত্র ড. রাগীব আলীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
 
বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী বিয়ের পর স্বামীর সাথে লন্ডনে চলে যান। লন্ডনে স্বামীর সংসার সুচারুভাবে চালিয়েও তিনি ড. রাগীব আলীর কঠোর শ্রম ও মেধায় প্রতিষ্ঠিত ‘তাজমহল’ নামক রেস্টুরেন্টের দেখাশোনা করতেন। তাঁর নিরলস পরিশ্রমে এটি একটি ব্যবসা সফল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ড. রাগীব আলীর অন্যান্য ব্যবসাসহ প্রতিটি কাজে তাঁর অনুপ্রেরণা ও অবদান ছিল অনস্বীকার্য। মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী চিন্তা ও চেতনায় একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক ছিলেন। তাই তিনি স্বামীকে নিয়ে দেশের মাটিতে এসে মানুষের সেবা করতে ব্রত হন। মেহনতি মানুষের জন্য তাঁর হাত ছিল সর্বদা প্রসারিত। তিনি বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন।
 
বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী দানবীর ড. রাগীব আলী প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন বহুল প্রচারিত স্বনামধন্য পত্রিকা ‘দৈনিক সিলেটের ডাক’ এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। নিজ হাতে গড়া স্বপ্নে লালিত মালনীছড়া চা-বাগান তাঁর অত্যন্ত প্রিয় ছিল। তিনি চা-পাতা চয়নকারী শ্রমিকদের সুখ-দুঃখের কথা শুনতেন এবং তাদের সমস্যা তাৎক্ষণিক সমাধান করতেন। ক্ষণজন্মা এই মহীয়সী নারী ২০০৬ সালের ১২ ডিসেম্বর মালনীছড়া চা বাগানের কোম্পানী বাংলোতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী, দু’সন্তান আবদুল হাই ও রেজিনা কাদির এবং স্নেহের নাতি-নাতনিদের রেখে যান ।
 
মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন কর্তৃক জীবদ্দশায় এবং মরণোত্তর অনেক পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন। তন্মধ্যে উল্লে­খযোগ্য কয়েকটি সম্মাননা হলো: ১৯৯৪ সালে সিলেটের মোহামেডান ফ্যান ক্লাব কর্তৃক প্রদত্ত সম্মাননা, ২০০৩ সালে মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি কর্তৃক প্রদত্ত সম্মাননা, সিলেট বিভাগ উন্নয়ন পরিষদ কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক প্রদত্ত সম্মাননা, ২০০৬ সালে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ইউনিট এর সন্ধানী কর্তৃক প্রদত্ত আজীবন সম্মাননা, Western Marine Service Ltd  কর্তৃক প্রদত্ত সম্মাননা,  সিলেটের ওয়েলফেয়ার আই সোসাইটি কর্তৃক মরণোত্তর সম্মাননা পদক-২০১০ এবং প্রতিভা বিকাশ সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ভলান্টারী এসোসিয়েশন ফর বাংলাদেশ কর্তৃক প্রদত্ত মরণোত্তর গুণীজন সম্মাননা এওয়ার্ড-২০১১ ইত্যাদি।
 
মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর জীবন ও কর্মের ওপর এখন পর্যন্ত বেশ কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে উল্লে­খযোগ্য কয়েকটি হলো: বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী এক মহীয়সী নারী, বইটি জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে; বইটি সম্পাদনা করেছেন-মেজর জেনারেল (অব.) প্রফেসর ডা. মো: নাজমুল ইসলাম, প্রকাশকাল- ১২ ডিসেম্বর-২০০৭। স্মৃতিতে বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী, বইটি লিডিং ইউনিভার্সিটি কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে; বইটি সম্পাদনা করেছেন-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এবিএম শহিদুল ইসলাম, প্রকাশকাল-জানুয়ারি ২০০৯। মানবতার প্রতিমূর্তি বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী, বইটি জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে; বইটি সম্পাদনা করেছেন-মেজর জেনারেল (অব.) প্রফেসর ডা. মো: নাজমুল ইসলাম, প্রকাশকাল- একুশে বইমেলা-২০১০। বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীকে নিবেদিত কবিতা, বইটি রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে; বইটি সম্পাদনা করেছেন-মুকুল চৌধুরী, প্রকাশকাল-১২ ডিসেম্বর ২০১০। এছাড়াও লিডিং ইউনিভার্সিটি, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, রাগীব-রাবেয়া ডিগ্রী কলেজ, রাগীবনগর এবং রাগীব-রাবেয়া হাইস্কুল এন্ড কলেজ, লামাকাজি, সিলেট  কর্তৃক এই মহীয়সীর জীবনালেখ্য নিয়ে বেশ কয়েকটি স্মারক প্রকাশিত হয়েছে।